ঢাকা ১২:৫৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যাওয়া নারী শ্রমিকদের সংখ্যা কমছে

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০১:৫৪:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪ ৯৮ বার পড়া হয়েছে
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যাওয়া নারী শ্রমিকদের অভিবাসনের হার কমে গেছে বলে সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে।

করোনা পরবর্তী সময়ে নারী কর্মীদের বিদেশ যাওয়ার সংখ্যা কিছুটা কমলেও ২০২২ সালেও সেই সংখ্যা এক লাখের উপরে ছিল।

কিন্তু গত বছর তা কমে এক লাখের নিচে নেমে এসে দাঁড়িয়েছে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে অভিবাসী হয়েছেন ৭৬ হাজার ১০৮ জন নারী কর্মী। যদিও এই বছরের শুরুর চার মাসে নারীদের অভিবাসী হওয়ার হার আরো কমেছে।

গত কয়েক বছরের তথ্যে দেখা গেছে, বিশেষ করে সৌদি আরব থেকে নির্যাতিত হয়ে ফিরে আসছেন অসংখ্য নারী। এছাড়া সেখানে কাজ করতে গিয়ে স্বাভাবিক মৃত্যু ছাড়াও আত্মহত্যা ও খুনের শিকার হয়েছেন অনেক নারী।

সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনার কারণে নারী কর্মীদের বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা ভাটা পড়েছে।

বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে নারী কর্মী পাঠানো শুরু হয় ১৯৯১ সাল থেকে।

যেসব দেশে নারী কর্মীরা যায় এগুলোর মধ্যে রয়েছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত, লেবানন, মালয়েশিয়া, জর্ডান, ওমান, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রুনাই, সাইপ্রাস, মৌরিতাস, হংকং, ইতালি, জাপান ইত্যাদি।

তবে, বাংলাদেশ থেকে অভিবাসী নারীদের বড় অংশ গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরব যায়।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, গত ২০ বছরে বাংলাদেশ থেকে এগার লাখ ৬২ হাজার ৭৯১ জন নারী শ্রমিক বিভিন্ন দেশে যান।

সরকারি এ সংস্থাটির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিদেশে নারী কর্মী যাওয়ার পর থেকে ২০১৭ সালে এক বছরে সর্বোচ্চ এক লাখ ২১ হাজার ৯২৫ জন নারী বিদেশে যান। ২০১৯ সাল পর্যন্ত বছরে এক লাখের বেশি নারী কর্মী পাঠানোর ধারা অব্যাহত ছিল।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের পরে এ সংখ্যা কমলেও ২০২২ সালে আবার লাখের ঘর পেরোয় নারী কর্মী বিদেশ যাওয়ার সংখ্যা। গতবছর আবার কমে লাখের নিচে এসে দাঁড়িয়েছে। অথচ গতবছর সর্বোচ্চ সংখ্যক শ্রমিক প্রবাসী হয়েছে। এ সংখ্যা তের লাখের বেশি। কিন্তু নারী শ্রমিকের সংখ্যা কমে হয়েছে ৭৬ হাজার ১০৮ জন।

এ বছরের প্রথম চার মাসে ২১ হাজার ৫৫৮ জন নারী শ্রমিক বিদেশে গেছেন।

সরকারি বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সৌদি আরবেই সর্বোচ্চ বেশি নারী কর্মী যায়। এ হার ৬৩ শতাংশ।

নির্যাতনের অভিযোগ ওঠায় ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন গৃহকর্মী পাঠানো বন্ধ করে দিলে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করে সৌদি আরব।

তবে, বাংলাদেশ থেকে যাওয়া এসব নারীদের অভিজ্ঞতা অনেক সময়ই সুখকর হয় না বলেঅভিবাসন নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলো বলছে। কেননা গৃহকর্মী হিসেবে যারা যায়, বেশিরভাগ সময়ই নির্যাতনের শিকার হয়ে তাদের অনেককে দেশে ফিরে আসতে হয়।

২০১৮ সালে সৌদি আরবে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে মাত্র পাঁচ মাসেই দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন এমন একজন নারীর সাথে কথা হয়েছে বিবিসি বাংলার। তিনি মানিকগঞ্জের একটি গ্রাম থেকে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নারী বলেন, “ এজেন্সি সৌদি যে মালিকের বাসায় দিছে তারা খারাপ ছিল। কাজ করাতো, খাবার চাইলে দিতো না, কাপড়-চোপড় দিতো না। মালিক গায়ে হাত দিত। পাঁচ মাসে একদিনও এমন হয় নাই তারা নির্যাতন করে নাই। পরে এমন অবস্থা দাঁড়ায় টিকতে না পাইরা ওই বাসা থেকে পালাই”।

“সৌদি পুলিশের কাছে সাহায্য চাই। পরে তারা অ্যাম্বাসির সাথে কথা বলে কোম্পানির মাধ্যমে দেশে পাঠায়” বলেন এই নারী।

মানিকগঞ্জেরই আরেকজন নারী সৌদি আরবে দেড় বছর থাকার পর ২০২২ সালে দেশে ফিরতে পেরেছেন।

তিনি বলেন, “যে সৌদি মালিকের বাসায় গেছি সেখানে ঘরের কাজ করতে হইত। কিন্তু মালিক শারীরিক নির্যাতন করতো। বাধা দিলে মেরে ফেলার কথা কইতো। আবার বাসা থেকে পালাইতে যাতে না পারি তালা দিয়া রাখতো। চারবারের চেষ্টার পরে একদিন সুযোগ পাইয়া বের হয়ে যাই। পরে অ্যাম্বাসি দেশে পাঠাইছে”।

তবে, গৃহকমী হিসেবে গিয়ে যেমন এরকম নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঘটনা ঘটেছে, আবার অন্য কাজে গেলে সফলভাবে দেশে ফেরার গল্পও রয়েছে নারী কর্মীদের। এদেরই একজন মনোয়ারা বেগম।

মানিকগঞ্জের এই নারী জানান ১৯৯৭ সালে সৌদি আরবে গিয়ে ১২ বছর রিয়াদের একটি হাসপাতালে সুইপারের কাজ করার পর তিনি দেশে ফিরেছেন।

মিজ বেগম বলেন, “ ১২ বছর হাসপাতালে কাজ করছি। পরে দেশে ফেরত আসছি। এখান থেকে আবার লেবাবনে যাই এক বাসায় ঘরের কাজ করতে। সেখানকার মালিক খুবই ভালো ছিল। পরিবারের পুরুষরা বোনের মত দেখতো। চার বছর থাকার পর দেশে ফেরত আসছি”।

শারীরিক নির্যাতনের কারণে গৃহকর্মী হিসেবে নারী শ্রমিক বিদেশ যাওয়ার সংখ্যা কিছুটা কমেছে বলে স্বীকার করেছেন সরকারি কর্মকর্তারা। তবে, প্রশিক্ষিত হয়ে অন্য পেশায় নারীরা যাচ্ছে বলেও জানান তারা।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর অতিরিক্ত মহাপরিচালক শাহ আবদুল তারিক বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ বিভিন্ন শারীরিক নির্যাতন – নিপীড়নের অভিযোগের কারণে নারীদের অভিজ্ঞতা ভালো না। তাই গৃহকর্মী হিসেবে নারীদের বিদেশ যাওয়া কমেছে। কারণ এ পেশায় নারীরা প্রশিক্ষণ নিয়ে যায় না। এর প্রভাব পড়েছে পুরো সংখ্যায়। কিন্তু অন্য পেশায় প্রশিক্ষণ নিয়ে নারীরা যাচ্ছে”।

তিনি বলছেন, “ আমরা চাই নারীরা বিভিন্ন পেশায় স্কিলড হয়ে যাক। দেশের বিভিন্ন জেলায় ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার রয়েছে।

যদিও অভিবাসন খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নারী কর্মী বিদেশ যাওয়ার সংখ্যা কমেছে, এ পরিসংখ্যানে এখনই পৌঁছানো যাবে না। কারণ গত কয়েক বছরের নির্যাতনের ঘটনাগুলোর প্রেক্ষিতে সরকার কিছু বিষয়ে কঠোর হওয়ার ফলে এটি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

ব্রাকের অভিবাসন কর্মসূচীর প্রধান শরীফুল হাসান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ এখনই নারী শ্রমিকদের বিদেশে যাওয়ার সংখ্যা কমেছে এটা এখনই বলা যাবে না। কারণ নির্যাতনসংক্রান্ত নানা ঘটনার কারণে সরকার প্রশিক্ষণ দেয়া, সনদ ছাড়া বিদেশ না যেতে দেয়াসহ বিভিন্ন নিয়ম কঠোর করে।”

“এর ফলে এটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কিন্তু এখনই কমে গেছে এটা বলা যাবে না। কারণ এখন নিয়ম কঠোর হওয়ায় সিস্টেমের মধ্যে এসেছে প্রক্রিয়া। কাজেই এটাকে কম বলার সুযোগ নেই” বলেন মি. হাসান।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যাওয়া নারী শ্রমিকদের সংখ্যা কমছে

আপডেট সময় : ০১:৫৪:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪

বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যাওয়া নারী শ্রমিকদের অভিবাসনের হার কমে গেছে বলে সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে।

করোনা পরবর্তী সময়ে নারী কর্মীদের বিদেশ যাওয়ার সংখ্যা কিছুটা কমলেও ২০২২ সালেও সেই সংখ্যা এক লাখের উপরে ছিল।

কিন্তু গত বছর তা কমে এক লাখের নিচে নেমে এসে দাঁড়িয়েছে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে অভিবাসী হয়েছেন ৭৬ হাজার ১০৮ জন নারী কর্মী। যদিও এই বছরের শুরুর চার মাসে নারীদের অভিবাসী হওয়ার হার আরো কমেছে।

গত কয়েক বছরের তথ্যে দেখা গেছে, বিশেষ করে সৌদি আরব থেকে নির্যাতিত হয়ে ফিরে আসছেন অসংখ্য নারী। এছাড়া সেখানে কাজ করতে গিয়ে স্বাভাবিক মৃত্যু ছাড়াও আত্মহত্যা ও খুনের শিকার হয়েছেন অনেক নারী।

সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনার কারণে নারী কর্মীদের বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা ভাটা পড়েছে।

বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে নারী কর্মী পাঠানো শুরু হয় ১৯৯১ সাল থেকে।

যেসব দেশে নারী কর্মীরা যায় এগুলোর মধ্যে রয়েছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত, লেবানন, মালয়েশিয়া, জর্ডান, ওমান, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রুনাই, সাইপ্রাস, মৌরিতাস, হংকং, ইতালি, জাপান ইত্যাদি।

তবে, বাংলাদেশ থেকে অভিবাসী নারীদের বড় অংশ গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরব যায়।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, গত ২০ বছরে বাংলাদেশ থেকে এগার লাখ ৬২ হাজার ৭৯১ জন নারী শ্রমিক বিভিন্ন দেশে যান।

সরকারি এ সংস্থাটির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিদেশে নারী কর্মী যাওয়ার পর থেকে ২০১৭ সালে এক বছরে সর্বোচ্চ এক লাখ ২১ হাজার ৯২৫ জন নারী বিদেশে যান। ২০১৯ সাল পর্যন্ত বছরে এক লাখের বেশি নারী কর্মী পাঠানোর ধারা অব্যাহত ছিল।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের পরে এ সংখ্যা কমলেও ২০২২ সালে আবার লাখের ঘর পেরোয় নারী কর্মী বিদেশ যাওয়ার সংখ্যা। গতবছর আবার কমে লাখের নিচে এসে দাঁড়িয়েছে। অথচ গতবছর সর্বোচ্চ সংখ্যক শ্রমিক প্রবাসী হয়েছে। এ সংখ্যা তের লাখের বেশি। কিন্তু নারী শ্রমিকের সংখ্যা কমে হয়েছে ৭৬ হাজার ১০৮ জন।

এ বছরের প্রথম চার মাসে ২১ হাজার ৫৫৮ জন নারী শ্রমিক বিদেশে গেছেন।

সরকারি বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সৌদি আরবেই সর্বোচ্চ বেশি নারী কর্মী যায়। এ হার ৬৩ শতাংশ।

নির্যাতনের অভিযোগ ওঠায় ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন গৃহকর্মী পাঠানো বন্ধ করে দিলে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করে সৌদি আরব।

তবে, বাংলাদেশ থেকে যাওয়া এসব নারীদের অভিজ্ঞতা অনেক সময়ই সুখকর হয় না বলেঅভিবাসন নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলো বলছে। কেননা গৃহকর্মী হিসেবে যারা যায়, বেশিরভাগ সময়ই নির্যাতনের শিকার হয়ে তাদের অনেককে দেশে ফিরে আসতে হয়।

২০১৮ সালে সৌদি আরবে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে মাত্র পাঁচ মাসেই দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন এমন একজন নারীর সাথে কথা হয়েছে বিবিসি বাংলার। তিনি মানিকগঞ্জের একটি গ্রাম থেকে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নারী বলেন, “ এজেন্সি সৌদি যে মালিকের বাসায় দিছে তারা খারাপ ছিল। কাজ করাতো, খাবার চাইলে দিতো না, কাপড়-চোপড় দিতো না। মালিক গায়ে হাত দিত। পাঁচ মাসে একদিনও এমন হয় নাই তারা নির্যাতন করে নাই। পরে এমন অবস্থা দাঁড়ায় টিকতে না পাইরা ওই বাসা থেকে পালাই”।

“সৌদি পুলিশের কাছে সাহায্য চাই। পরে তারা অ্যাম্বাসির সাথে কথা বলে কোম্পানির মাধ্যমে দেশে পাঠায়” বলেন এই নারী।

মানিকগঞ্জেরই আরেকজন নারী সৌদি আরবে দেড় বছর থাকার পর ২০২২ সালে দেশে ফিরতে পেরেছেন।

তিনি বলেন, “যে সৌদি মালিকের বাসায় গেছি সেখানে ঘরের কাজ করতে হইত। কিন্তু মালিক শারীরিক নির্যাতন করতো। বাধা দিলে মেরে ফেলার কথা কইতো। আবার বাসা থেকে পালাইতে যাতে না পারি তালা দিয়া রাখতো। চারবারের চেষ্টার পরে একদিন সুযোগ পাইয়া বের হয়ে যাই। পরে অ্যাম্বাসি দেশে পাঠাইছে”।

তবে, গৃহকমী হিসেবে গিয়ে যেমন এরকম নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঘটনা ঘটেছে, আবার অন্য কাজে গেলে সফলভাবে দেশে ফেরার গল্পও রয়েছে নারী কর্মীদের। এদেরই একজন মনোয়ারা বেগম।

মানিকগঞ্জের এই নারী জানান ১৯৯৭ সালে সৌদি আরবে গিয়ে ১২ বছর রিয়াদের একটি হাসপাতালে সুইপারের কাজ করার পর তিনি দেশে ফিরেছেন।

মিজ বেগম বলেন, “ ১২ বছর হাসপাতালে কাজ করছি। পরে দেশে ফেরত আসছি। এখান থেকে আবার লেবাবনে যাই এক বাসায় ঘরের কাজ করতে। সেখানকার মালিক খুবই ভালো ছিল। পরিবারের পুরুষরা বোনের মত দেখতো। চার বছর থাকার পর দেশে ফেরত আসছি”।

শারীরিক নির্যাতনের কারণে গৃহকর্মী হিসেবে নারী শ্রমিক বিদেশ যাওয়ার সংখ্যা কিছুটা কমেছে বলে স্বীকার করেছেন সরকারি কর্মকর্তারা। তবে, প্রশিক্ষিত হয়ে অন্য পেশায় নারীরা যাচ্ছে বলেও জানান তারা।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর অতিরিক্ত মহাপরিচালক শাহ আবদুল তারিক বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ বিভিন্ন শারীরিক নির্যাতন – নিপীড়নের অভিযোগের কারণে নারীদের অভিজ্ঞতা ভালো না। তাই গৃহকর্মী হিসেবে নারীদের বিদেশ যাওয়া কমেছে। কারণ এ পেশায় নারীরা প্রশিক্ষণ নিয়ে যায় না। এর প্রভাব পড়েছে পুরো সংখ্যায়। কিন্তু অন্য পেশায় প্রশিক্ষণ নিয়ে নারীরা যাচ্ছে”।

তিনি বলছেন, “ আমরা চাই নারীরা বিভিন্ন পেশায় স্কিলড হয়ে যাক। দেশের বিভিন্ন জেলায় ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার রয়েছে।

যদিও অভিবাসন খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নারী কর্মী বিদেশ যাওয়ার সংখ্যা কমেছে, এ পরিসংখ্যানে এখনই পৌঁছানো যাবে না। কারণ গত কয়েক বছরের নির্যাতনের ঘটনাগুলোর প্রেক্ষিতে সরকার কিছু বিষয়ে কঠোর হওয়ার ফলে এটি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

ব্রাকের অভিবাসন কর্মসূচীর প্রধান শরীফুল হাসান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ এখনই নারী শ্রমিকদের বিদেশে যাওয়ার সংখ্যা কমেছে এটা এখনই বলা যাবে না। কারণ নির্যাতনসংক্রান্ত নানা ঘটনার কারণে সরকার প্রশিক্ষণ দেয়া, সনদ ছাড়া বিদেশ না যেতে দেয়াসহ বিভিন্ন নিয়ম কঠোর করে।”

“এর ফলে এটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কিন্তু এখনই কমে গেছে এটা বলা যাবে না। কারণ এখন নিয়ম কঠোর হওয়ায় সিস্টেমের মধ্যে এসেছে প্রক্রিয়া। কাজেই এটাকে কম বলার সুযোগ নেই” বলেন মি. হাসান।