বৈরী আবহাওয়ায় পর্যটন ব্যবসায়ী অসহায়
- আপডেট সময় : ১০:৫৮:২১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ জুলাই ২০২৪ ৯৩ বার পড়া হয়েছে
সিলেটের ভোলাগঞ্জ সাদাপাথরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে সারা বছরই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে আসেন। সাপ্তাহিক ছুটি ও সরকারি ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকদের ভিড় থাকে বেশি। বিশেষ করে দুই ঈদে সাদাপাথরে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় থাকে। তখন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা খাতগুলো হয়ে ওঠে চাঙ্গা। পর্যটকদের ঘিরে হোটেল, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট, রেন্ট এ কার, নৌকা এবং স্থানীয় কসমেটিক ও সাদাপাথরে ছবি সম্বলিত টিশার্টের দোকান সহ আরো অন্যান ব্যবসা জমজমাট হয়ে ওঠে। এসময় পর্যটকদের বরণে নানা প্রস্তুতি নেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। কেউ হোটেল বুকিংয়ে ছাড় দেন, কেউ স্বল্পমূল্যে খাবারের প্যাকেজের অফার দেন, কেউবা আবার পণ্য কেনায় ছাড় দেন। এবারের ঈদুল আজহায় ব্যবসা নিয়ে এমনই স্বপ্ন দেখেছিলেন সাদাপাথরের পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বৈরী আবহাওয়া ও বন্যায় ভেস্তে যায় ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টদের এমন প্রস্তুতি। দোকানে মালামাল আনলেও পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ থাকায় লোকসানে পড়তে হয়েছে তাদের। বন্যার কারণে পর্যটকরা সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্র মুখী হচ্ছেন না যার কারণে বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের। ঈদ পরবর্তী সাদাপাথর পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের খোঁজখবর নিতে কোম্পানিগঞ্জ অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি রুহুল আমিন বাবুল, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল ও কোষাধ্যক্ষ সোহেল আহমদ সহ সদস্যরা। তারা ব্যবসায়ীদের ব্যবসার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। ব্যবসায়ীরা বলেন বন্যার কারণে ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর কেন্দ্র মুখি হচ্ছে না পর্যটকরা। তাই পর্যটন খাতের সঙ্গে জড়িত সকল ব্যবসায়ীরা ঈদুল আজহায় প্রচুর টাকার ক্ষতি মধ্যে পড়তে হচ্ছে । যা পুষিয়ে নেওয়ারও কোনো সুযোগ নেই।
বন্যার কারণে পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ থাকায় অন্য ব্যবসায়ীদের মতো ক্ষতির শিকার হয়েছেন কাপড় ব্যবসায়ী সাজুল মিয়া। তিনি বলেন, এখন ঈদের সময় এই সময়ে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় থাকার কথা। কিন্তু বন্যায় সব শেষ করে দিয়েছে। আমাদের পরিবার এই ব্যবসার টাকা দিয়ে চলে। পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ থাকায় আমরা কাপড় ব্যবসায়ীরা ঈদে ব্যবসা করতে পারিনি।
সাদাপাথর পর্যটন স্পটের ব্যবসায়ী গোপিকারঞ্জন দাশ বলেন, আমরা ব্যবসায়ীরা অনেক ঋণগ্রস্ত হয়ে টাকা নিয়ে মালামাল সংগ্রহ করে দোকান সাজিয়েছি। কিন্তু হঠাৎ পাহাড়ি ঢলের কারণে স্পট বন্ধ হয়ে যায়। এখন পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে দিন যাপন করছি। কীভাবে আবার ঘুরে দাঁড়াব বুঝতে পারছি না।
সাদাপাথর পর্যটন ব্যবসায়ী সমিতির সিনিয়র সহ সভাপতি ও হোটেল আলবেলার স্বত্বাধিকারী সাধারণ সম্পাদক
মোাঃ লিটন মিয়া বলেন, চলমান এই বন্যা পরিস্থিতির কারণে এবার ঈদে ব্যবসায়িক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৪ থেকে ৫ কোটি টাকা। পর্যটক বরনে আমাদের ব্যাপক প্রস্তুতি ছিল কিন্তু বন্যার কারণে ব্যবসা হয়নি।
সাদাপাথর পর্যটন ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও মেঘের বাড়ি রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী মোঃ সফাত উল্লাহ বলেন, পর্যটকদের ওপর আমাদের ব্যবসা নির্ভর করে। সাদাপাথরে প্রায় ১২০ টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে। এই ১২০ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ঢলের পানিতে অনেকের দোকানপাট প্লাবিত হয়েছে। অনেকের মালামাল ভেসে গেছে। বেশির ভাগ ব্যবসায়ী লোন নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। এই ভরা মৌসুমে ব্যবসা করতে না পারায় এই লোনের কিস্তি দিতেও অনেকে হিমশিম খাচ্ছি।
কোম্পানীগঞ্জ অনলাইন প্রেসক্লাব সভাপতি রুহুল আমিন বাবুল জানান, সাদা পাথর পর্যটন ঘাঁট এলাকায় যারা ক্ষুদ্র ব্যবসার সাথে জড়িত তাদের ব্যবসার মানোন্নয়ন করতে হলে সাদা পাথর পর্যটনকে আরো আধুনিক করে গড়ে তুলতে হবে। যেমন ধলাই নদীর মধ্যভাগে বহুপুরাতন একটি রেলওয়ের রোপওয়ে আছে। সেখানে প্রায় ৫-৬ শ একর জমি রয়েছে। এটাকে পর্যটনের আদলে সাজিয়ে দিলে বাংলাদেশ তথা বিশ্বের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে খ্যাতি অর্জন করবে। তখন সাদা পাথর পর্যটন এলাকায় প্রতিদিন কয়েক হাজার পর্যটকের আনাগোনায় মুখরিত হয়ে উঠবে। এতে ব্যবসায়ীদের উন্নয়ন ও এলাকার উন্নয়নে ভুমিকা রাখবে।