ঢাকা ০৫:৪৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
নান্দাইলে সাত আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার।। মনোহরদীতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের বিদায়ী সংবর্ধনা প্রদান নরসিংদীতে ব্র্যাকের “নিরাপদ অভিবাসন ও বিদেশ-ফেরত অভিবাসীদের পুনরেকত্রীকরণ” শীর্ষক ইউনিয়ন কর্মশালা অনুষ্ঠিত সততা চর্চার অভ্যাস গড়তে শিক্ষার্থীদের বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত ফুলপুর জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নয়া কমিটি গঠন সভাপতি মাওঃ আবু রায়হান, সম্পাদক মাওঃ আওলাদ রাজশাহীতে সরকারি জায়গা দখল করে বিএনপি নেতাদের অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর পর্যটনে দর্শনার্থীদের সুবিদায় নদী খনন রায়পুরায় ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত ব্রাহ্মনবাড়িয়া অনার্সের কেন্দ্র স্থানান্তরের দাবীতে মানব বন্ধন মনোহরদী টু কটিয়াদী সংযোগ রাস্তা ভেঙ্গে যাওয়ায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে যাতায়াতকারীরা।

কালনাগিনী

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:২৬:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ জুন ২০২৪ ১২৪ বার পড়া হয়েছে
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

** যদি প্রশ্ন করা হয়, বাংলাদেশের সবচেয়ে ওভাররেটেড সাপ কোনটি ? তাহলে আমি এক বাক্যে বলব, কালনাগিনী সাপ। গল্প, উপন্যাস, মিথ, বেদে সম্প্রদায় আর নাগ-নাগিনীর মুভির আজগুবি কাহিনীর কারণে কালনাগিনীর এমন একটা ইমেজ তৈরি হয়েছে যে, কালনাগিনী মানেই বুঝি দংশন আর কয়েক মুহুর্তের মধ্যেই মৃত্যু। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, কালনাগিনী সাপ মৃদু বিষধর সাপ। যার কামড়ে মানুষ তো দূরের কথা। বড় সাইজের ব্যাঙও মরে না। এই সাপ আকারেও ছোট হয়। আসলে নাগ নাগিনীর মুভিতে কালনাগিনী নামে যা দেখানো হয়, তা হচ্ছে গোখরা অথবা কেউটে।
.
গোখরার রাজকীয় ফণা, কেউটের আক্রমণাত্মক স্বভাব, কালনাগিনীর কল্পকাহিনী কিংবা সাম্প্রতিক সময়ের কিলিং মেশিন খ্যাত রাসেলস ভাইপারের ইমজের নিচে যে সাপের ইমেজ চাপা পড়ে যায় তা হচ্ছে, কালাচ, কালচিতি বা সিন্ধু কালাচ সাপ। বাংলাদেশের সবচেয়ে আন্ডাররেটেড সাপ হচ্ছে এই কালাচ সাপ। যুগ যুগ ধরেই এই সাপ লোককাহিনী, গল্প উপন্যাস, নাটক সিনেমায় অবহেলিত হয়ে আসছে। কারণ সে গোখরা বা কেউটের মতো রাজকীয় ফণা তুলতে পারে না, রাজগোখরার মতো বিশাল শরীরের অধিকারীও নয় সে, কেউটের মতো তেড়ে এসে মানুষকে কামড়ানোর স্বভাব তার নেই, কালনাগিনীর মতো লোককাহিনীতে তার স্থান নেই। রাসেলস ভাইপারের মতো ইংরেজি নামের ভাবসাবও নেই। শহরের মানুষ তো বটেই, গ্রামের মানুষও এই সাপের সাথে খুব একটা পরিচিত না। অথচ বাংলাদেশ তথা ভারতীয় উপমহাদেশে সবচাইতে বেশি মানুষকে হত্যা করার রেকর্ড এই কালাচ সাপের দখলে। ঘুমন্ত মানুষকে কামড় দেওয়ার ব্যাপারে তার জুড়ি নেই।
Common krait বা কালাচ সাপের বৈশিষ্ট্য হলো- এই সাপ আকারে তেমন একটা বড় হয় না। সাধারণত ৩ ফুট থেকে ৫ ফুটের মতো দৈর্ঘ্য হয়। দেহ কালো বর্ণের, তার মাঝে সাদা ডোরাকাটা থাকে। এই সাপ নিশাচর প্রকৃতির। সাধারণত রাতে শিকার করার জন্য বের হয়। ইঁদুর, ব্যাঙ, পোকামাকড় শিকারের জন্য এরা প্রায়ই মানুষের বাসা-বাড়িতে ঢুকে পড়ে। এই সাপের সবচাইতে বাজে স্বভাব হচ্ছে, এই সাপ অকারণেই মানুষকে কামড়ায়। বিশেষ করে ঘুমন্ত অবস্থায় মানুষকে কামড়ানোর রেকর্ড কালাচ সাপের সর্বাধিক । এর বিষদাঁত খুব ছোট হওয়ায় কামড়ালে ব্যথা পাওয়া যায় না। আক্রান্ত ব্যাক্তি কোনরকম ব্যাথা বা জ্বালাপোড়া অনুভব করে না। এদের বিষ নিউরোটক্সিন । যা রক্তের সাথে মিশে শরীরের নার্ভগুলোকে অসার করে ফেলে। আগেকার দিনে গ্রামেগঞ্জে মাঝেমাঝেই ঘুমের মধ্যে মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটত। যার জন্য অন্যতম দায়ী এই কালাচ সাপ। গতবছর কুষ্টিয়ায় ঘুমন্ত অবস্থায় মা- মেয়ের মৃত্যু, মাস তিনেক আগে কালাচ সাপের কামড়ে ঘুমন্ত অবস্থায় একই মাদ্রাসার দুইজন ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। তার কিছুদিন পর এক তরুণ এই সাপ নিয়ে টিকটক ভিডিও বানাতে গিয়ে সাপের কামড়ে মারা যায়। আতংকের বিষয় হচ্ছে, রাসেলস ভাইপারের পাশাপাশি এই সাপের বিস্তারও ক্রমেই বেড়ে চলেছে। গ্রাম থেকে ক্রমেই শহরের দিকে ধেয়ে আসছে এই দুই প্রজাতির সাপ। সাবধান !
.
.
___ তানভীর রবিন

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

কালনাগিনী

আপডেট সময় : ০৯:২৬:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ জুন ২০২৪

** যদি প্রশ্ন করা হয়, বাংলাদেশের সবচেয়ে ওভাররেটেড সাপ কোনটি ? তাহলে আমি এক বাক্যে বলব, কালনাগিনী সাপ। গল্প, উপন্যাস, মিথ, বেদে সম্প্রদায় আর নাগ-নাগিনীর মুভির আজগুবি কাহিনীর কারণে কালনাগিনীর এমন একটা ইমেজ তৈরি হয়েছে যে, কালনাগিনী মানেই বুঝি দংশন আর কয়েক মুহুর্তের মধ্যেই মৃত্যু। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, কালনাগিনী সাপ মৃদু বিষধর সাপ। যার কামড়ে মানুষ তো দূরের কথা। বড় সাইজের ব্যাঙও মরে না। এই সাপ আকারেও ছোট হয়। আসলে নাগ নাগিনীর মুভিতে কালনাগিনী নামে যা দেখানো হয়, তা হচ্ছে গোখরা অথবা কেউটে।
.
গোখরার রাজকীয় ফণা, কেউটের আক্রমণাত্মক স্বভাব, কালনাগিনীর কল্পকাহিনী কিংবা সাম্প্রতিক সময়ের কিলিং মেশিন খ্যাত রাসেলস ভাইপারের ইমজের নিচে যে সাপের ইমেজ চাপা পড়ে যায় তা হচ্ছে, কালাচ, কালচিতি বা সিন্ধু কালাচ সাপ। বাংলাদেশের সবচেয়ে আন্ডাররেটেড সাপ হচ্ছে এই কালাচ সাপ। যুগ যুগ ধরেই এই সাপ লোককাহিনী, গল্প উপন্যাস, নাটক সিনেমায় অবহেলিত হয়ে আসছে। কারণ সে গোখরা বা কেউটের মতো রাজকীয় ফণা তুলতে পারে না, রাজগোখরার মতো বিশাল শরীরের অধিকারীও নয় সে, কেউটের মতো তেড়ে এসে মানুষকে কামড়ানোর স্বভাব তার নেই, কালনাগিনীর মতো লোককাহিনীতে তার স্থান নেই। রাসেলস ভাইপারের মতো ইংরেজি নামের ভাবসাবও নেই। শহরের মানুষ তো বটেই, গ্রামের মানুষও এই সাপের সাথে খুব একটা পরিচিত না। অথচ বাংলাদেশ তথা ভারতীয় উপমহাদেশে সবচাইতে বেশি মানুষকে হত্যা করার রেকর্ড এই কালাচ সাপের দখলে। ঘুমন্ত মানুষকে কামড় দেওয়ার ব্যাপারে তার জুড়ি নেই।
Common krait বা কালাচ সাপের বৈশিষ্ট্য হলো- এই সাপ আকারে তেমন একটা বড় হয় না। সাধারণত ৩ ফুট থেকে ৫ ফুটের মতো দৈর্ঘ্য হয়। দেহ কালো বর্ণের, তার মাঝে সাদা ডোরাকাটা থাকে। এই সাপ নিশাচর প্রকৃতির। সাধারণত রাতে শিকার করার জন্য বের হয়। ইঁদুর, ব্যাঙ, পোকামাকড় শিকারের জন্য এরা প্রায়ই মানুষের বাসা-বাড়িতে ঢুকে পড়ে। এই সাপের সবচাইতে বাজে স্বভাব হচ্ছে, এই সাপ অকারণেই মানুষকে কামড়ায়। বিশেষ করে ঘুমন্ত অবস্থায় মানুষকে কামড়ানোর রেকর্ড কালাচ সাপের সর্বাধিক । এর বিষদাঁত খুব ছোট হওয়ায় কামড়ালে ব্যথা পাওয়া যায় না। আক্রান্ত ব্যাক্তি কোনরকম ব্যাথা বা জ্বালাপোড়া অনুভব করে না। এদের বিষ নিউরোটক্সিন । যা রক্তের সাথে মিশে শরীরের নার্ভগুলোকে অসার করে ফেলে। আগেকার দিনে গ্রামেগঞ্জে মাঝেমাঝেই ঘুমের মধ্যে মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটত। যার জন্য অন্যতম দায়ী এই কালাচ সাপ। গতবছর কুষ্টিয়ায় ঘুমন্ত অবস্থায় মা- মেয়ের মৃত্যু, মাস তিনেক আগে কালাচ সাপের কামড়ে ঘুমন্ত অবস্থায় একই মাদ্রাসার দুইজন ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। তার কিছুদিন পর এক তরুণ এই সাপ নিয়ে টিকটক ভিডিও বানাতে গিয়ে সাপের কামড়ে মারা যায়। আতংকের বিষয় হচ্ছে, রাসেলস ভাইপারের পাশাপাশি এই সাপের বিস্তারও ক্রমেই বেড়ে চলেছে। গ্রাম থেকে ক্রমেই শহরের দিকে ধেয়ে আসছে এই দুই প্রজাতির সাপ। সাবধান !
.
.
___ তানভীর রবিন