ঢাকা ০৯:২৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শহীদ নাজমুল আহসান ও ঐতিহাসিক কাটাখালি যুদ্ধ দিবস আজ।

নালিতাবাড়ী (প্রতিনিধি)শেরপুর
  • আপডেট সময় : ০৯:৪৩:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ জুলাই ২০২৪ ৪৬ বার পড়া হয়েছে
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আজ ৬ জুলাই শনিবার শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ঐতিহাসিক কাটাখালী যুদ্ধ দিবস।

১৯৭১ সালের এই দিনে শেরপুরের কাটাখালী ব্রিজ ভাঙ্গার যুদ্ধে সম্মুখ সমরে শহীদ হন ১১নং সেক্টরের ১নং কোম্পানী কমান্ডার অকুতোভয় যোদ্ধা স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্ত শহীদ নাজমুল আহসান, শহীদ মোফাজ্জল হোসেন, শহীদ আলী হোসেন ও স্থানীয় বেসামরিক কতিপয় নাগরিক সহ ১২ জন শহীদ হন। শহীদ নাজমুল আহসান নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন।

স্বাধীনতা অর্জনের পর শহীদ নাজমুলের নামে ময়মনসংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি হল, নালিতাবাড়ীতে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কলেজটি হলো সরকারি নাজমুল স্মৃতি কলেজে ।
শেরপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্প্রতি কাটাখালীতে যুদ্ধ বিধ্বস্ত ব্রিজের পাশে শহীদ নাজমুল পার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৮ সালে শহীদ নাজমুলকে স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ‘অপারেশন কাটাখালী’ যুদ্ধের সরকারি স্বীকৃতি মিলেছে।

মুক্তিয্রদ্ধা ও স্থানীয়দের তথ্যমতে, ১৯৭১ সালের ৫ জুলাই রাতে পরিকল্পনা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধারা ডিনামাইট ফিট করে নালিনাবাড়ী-ঝিনাইগাতী-শেরপুর সড়কের কাটাখালি ব্রিজ উড়িয়ে দেন। এ অপারেশনের নেতৃত্বে প্রদান করেন,   ১১নং সেক্টরের ১নং কোম্পানী কমান্ডার নাজমুল আহসান।
সফল অপারেশন শেষ করতে ভোর হয়ে যাওয়ায় এবং দিনের আলো ফুটে উঠায় পার্শ্ববর্তী রাঙ্গামাটি গ্রামে আশ্রয় নেন নাজমুল আহসানসহ মুক্তিযোদ্ধারা। কোথাও বের হওয়া নিরাপদ মনে না করে পরিশ্রান্ত মুক্তিযোদ্ধারা সেখানেই বিশ্রাম নিচ্ছিলেন।কিন্তু ওই গ্রামের দালাল জালাল মিস্ত্রী পাক বাহিনীর স্থানীয় হেড কোয়ার্টার আহাম্মদনগর ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের খবরটি পৌঁছে দেন।এ সংবাদ পেয়ে পাক হানাদার বাহিনী ৬ জুলাই সকালে স্থানীয় রাজাকার, আল-বদরদের সঙ্গে নিয়ে রাঙ্গামাটি গ্রাম তিনদিক থেকে ঘিরে ফেলে গুলিবর্ষণ শুরু করে। কমান্ডার নাজমুল আহসানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা গুলি ছুড়ে। শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। ওই গ্রামের তিনদিক থেকে ঘিরে ফেলা মুক্তিযোদ্ধাদের যাওয়ার একমাত্র পথ খোলা ছিল রাঙ্গামাটি বিল। ওই বিলের পানিতে নেমে কভারিং ফায়ার করতে করতে কমান্ডার নাজমুল আহসান মুক্তিযোদ্ধাদের রাঙ্গামাটি বিল সাঁতরিয়ে চলে যাওয়ার সুযোগ করে দেন। সেখানেই পাক সেনাদের ব্রাশ ফায়ারে কমান্ডার নাজমুল আহসান শহীদ হন। কমান্ডার নাজমুলের লাশ আনতে গিয়ে পাক হানাদারদের গুলিতে তার চাচাতো ভাই মোফাজ্জল হোসেন ও আলী হোসেনও শহীদ হন।

মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেয়ার অপরাধে পাক বাহিনী রাঙ্গামাটি গ্রামের ৬০ থেকে ৭০ জনকে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে। এতে ঘটনাস্থলেই ৯ জন শহীদ হন।

দিবসটি উপলক্ষে শহীদ নাজমুল পার্কে শহীদ নাজমুল আহসানের স্মৃতিস্তম্ভে পূষ্পার্ঘ অর্পন ও আলোচনা সভাসহ নানা্ কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

শহীদ নাজমুল আহসান ও ঐতিহাসিক কাটাখালি যুদ্ধ দিবস আজ।

আপডেট সময় : ০৯:৪৩:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ জুলাই ২০২৪

আজ ৬ জুলাই শনিবার শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ঐতিহাসিক কাটাখালী যুদ্ধ দিবস।

১৯৭১ সালের এই দিনে শেরপুরের কাটাখালী ব্রিজ ভাঙ্গার যুদ্ধে সম্মুখ সমরে শহীদ হন ১১নং সেক্টরের ১নং কোম্পানী কমান্ডার অকুতোভয় যোদ্ধা স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্ত শহীদ নাজমুল আহসান, শহীদ মোফাজ্জল হোসেন, শহীদ আলী হোসেন ও স্থানীয় বেসামরিক কতিপয় নাগরিক সহ ১২ জন শহীদ হন। শহীদ নাজমুল আহসান নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন।

স্বাধীনতা অর্জনের পর শহীদ নাজমুলের নামে ময়মনসংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি হল, নালিতাবাড়ীতে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কলেজটি হলো সরকারি নাজমুল স্মৃতি কলেজে ।
শেরপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্প্রতি কাটাখালীতে যুদ্ধ বিধ্বস্ত ব্রিজের পাশে শহীদ নাজমুল পার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৮ সালে শহীদ নাজমুলকে স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ‘অপারেশন কাটাখালী’ যুদ্ধের সরকারি স্বীকৃতি মিলেছে।

মুক্তিয্রদ্ধা ও স্থানীয়দের তথ্যমতে, ১৯৭১ সালের ৫ জুলাই রাতে পরিকল্পনা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধারা ডিনামাইট ফিট করে নালিনাবাড়ী-ঝিনাইগাতী-শেরপুর সড়কের কাটাখালি ব্রিজ উড়িয়ে দেন। এ অপারেশনের নেতৃত্বে প্রদান করেন,   ১১নং সেক্টরের ১নং কোম্পানী কমান্ডার নাজমুল আহসান।
সফল অপারেশন শেষ করতে ভোর হয়ে যাওয়ায় এবং দিনের আলো ফুটে উঠায় পার্শ্ববর্তী রাঙ্গামাটি গ্রামে আশ্রয় নেন নাজমুল আহসানসহ মুক্তিযোদ্ধারা। কোথাও বের হওয়া নিরাপদ মনে না করে পরিশ্রান্ত মুক্তিযোদ্ধারা সেখানেই বিশ্রাম নিচ্ছিলেন।কিন্তু ওই গ্রামের দালাল জালাল মিস্ত্রী পাক বাহিনীর স্থানীয় হেড কোয়ার্টার আহাম্মদনগর ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের খবরটি পৌঁছে দেন।এ সংবাদ পেয়ে পাক হানাদার বাহিনী ৬ জুলাই সকালে স্থানীয় রাজাকার, আল-বদরদের সঙ্গে নিয়ে রাঙ্গামাটি গ্রাম তিনদিক থেকে ঘিরে ফেলে গুলিবর্ষণ শুরু করে। কমান্ডার নাজমুল আহসানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা গুলি ছুড়ে। শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। ওই গ্রামের তিনদিক থেকে ঘিরে ফেলা মুক্তিযোদ্ধাদের যাওয়ার একমাত্র পথ খোলা ছিল রাঙ্গামাটি বিল। ওই বিলের পানিতে নেমে কভারিং ফায়ার করতে করতে কমান্ডার নাজমুল আহসান মুক্তিযোদ্ধাদের রাঙ্গামাটি বিল সাঁতরিয়ে চলে যাওয়ার সুযোগ করে দেন। সেখানেই পাক সেনাদের ব্রাশ ফায়ারে কমান্ডার নাজমুল আহসান শহীদ হন। কমান্ডার নাজমুলের লাশ আনতে গিয়ে পাক হানাদারদের গুলিতে তার চাচাতো ভাই মোফাজ্জল হোসেন ও আলী হোসেনও শহীদ হন।

মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেয়ার অপরাধে পাক বাহিনী রাঙ্গামাটি গ্রামের ৬০ থেকে ৭০ জনকে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে। এতে ঘটনাস্থলেই ৯ জন শহীদ হন।

দিবসটি উপলক্ষে শহীদ নাজমুল পার্কে শহীদ নাজমুল আহসানের স্মৃতিস্তম্ভে পূষ্পার্ঘ অর্পন ও আলোচনা সভাসহ নানা্ কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে।