ঢাকা ১০:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রত্যেকের জায়গা থেকে আমরা দুর্নীতিবাজ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:৫৬:৫০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৪০ বার পড়া হয়েছে
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ভালো মানুষ আছে বলে পৃথিবীটা এখনো টিকে আছে। এই ভালো মানুষগুলো না থাকলে পৃথিবীটা সম্পূর্ণভাবে বসবাসের অযোগ্য হয়ে যেত। যদিও

আমার এই সোনার বাংলাদেশে ২০ ভাগ জায়গা সুন্দর বসবাসের যোগ্য কিনা সন্দেহ হয়। আমি আমার নিজেকে দিয়ে প্রথমে শুরু করতে

চাই। আমি একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালাই ,যেখানে আমাকে প্রতিদিন কামলা দিতে হয় সকাল ৯ থেকে রাত ৭ টা বা ৯ টা অনেক দিন ফজরের আযান

পর্যন্ত । এখন অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে চোর ছাড়া কারো এতক্ষণ কী কাজ থাকে? এমন প্রশ্নের সম্মূখীন হয়েছি তাই নিজের

আত্মসমালোচনা থেকে ই বলছি। দৈনিন্দিন চিঠির উত্তর দেয়া,বিভিন্ন অফিসের সাথে যোগাযোগ করা, চিঠি লিখা , দিন শেষে হিসাব

করা,অভিভাবকদের সমস্যা শোনা, শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধান, বিচার নালিশ , মাঝে মাঝে নিজের বাথরুম পরিস্কার করা, রুম পরিস্কার করা,

কম্পিউটার

অপেন হচ্ছেনা,  প্রিন্টারে প্রিন্ট নিচ্ছেনা, সফটওয়ারে এন্ট্রি দিতে সমস্যা হচ্ছে। রেজাল্ট পোষ্টিং , পাবলিশড, শিক্ষকদের ব্যক্তিগত,  প্রাতিষ্ঠানিক

সমস্যার কথা আমি কামলাকে শুনতে হয়। এর পরেও  অনেক শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের কাছে সাজতে হয় চোর। কারণ সার্টিফিকেট

নেওয়ার সময় কেন টাকা লাগে? খুব সুন্দর প্রশ্ন, আমারও  একই প্রশ্ন সার্টিফিকেট নিতে কেন টাকা লাগবে? আমি ৯০ দশকে সরকারি বালক উচ্চ

বিদ্যালয় থেকে পাশ করা একজন শিক্ষার্থী, আমার প্রশংসাপত্র, সার্টিফিকেট আনার সময়ও টাকা লেগেছিল। কিন্তু কেন লাগে এই প্রশ্ন সকল

অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের মতো আমারও।   কেন টাকা লাগে?।

আমার এই লেখা যেসব ফেরেশতারা পড়বেন তারা বাজে কমেন্ট করা থেকে বিরত থাকবেন। কারণ আমরা জানি ব্যবহারেই বংশের পরিচয়। আমি যে

প্রতিষ্ঠান চালাই সেই প্রতিষ্ঠানে সরকার কোন আর্থিক সহযোগিতা করেনা সেটা সবার যেনে রাখা ভালো।

যাই হোক সার্টিফিকেট আনলে প্রথমেই ঢাকা বোর্ডের পিয়ন স্যারকে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করতে হয় স্যার আপনি কেমন আছেন? পরে যেতে হয়

কেরানি স্যারের কাছে। কেরানি স্যারকে খুশি করতে পারলে রেজিঃ,সার্টিফিকেট,বা অন্যান্য ডকুমেন্ট আনা যায়। আর একটা পেট যেহেতু

আল্লাহ দিসে সেহেতু সকালে বাসে রওনা দিলে  সারাদিন কিছু খাবার দাবার খেতে হয়,সেখানেও যাতায়াত সহ বেশ কিছু টাকা খরচ হয়    এখন এই

টাকার যোগান আমি চুরি না করে দিতে পারিনা। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২০০ টাকা নিয়ে এই কাজটা করে থাকি। যদিও অনেকের দাবী আমি

২০০০ টাকাও নিয়ে থাকি।  তাহলে যেহেতু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আমি এই টাকা নিয়ে থাকি সেহেতু আমি আমার অবস্থান থেকে একজন  অপরাধি

এবং দুর্নীতিবাজ, বাংলাদেশের দন্ডবিধি যে আইনের আওতায় এই অপরাধে অপরাধী হবো সেই অপরাধে আমাকে শাস্তি প্রদানের জন্য

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি। কিন্তু যিনি আমাকে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন উনার যদি কোন শাস্তি যোগ্য অপরাধ থাকে তাহলে আগে তার

শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এবং যিনি বা যারা অভিযোগ করবেন তিনিও যদি কোন শাস্তি যোগ্য অপরাধ করে থাকেন তিনিও শাস্তির

আওতা থেকে যেন বাদ না যায়।  কারণ আমার শিক্ষাটাতো আমার সংশ্লিষ্টকর্তৃ পক্ষ দিয়েছেন।

আরও আগের কথা বলি যখন আমার প্রতিষ্ঠানের সরকারি অনুমোদন ছিলনা তখন যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ,একটি (এম.পিও ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান)

আমার শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিত সেখানে রেজিষ্ট্রেশন ফি বাবদ দেয়া লাগত ৫০০ টাকা এবং ঐ প্রতিষ্ঠানে আবার ভর্তি  বাবদও একটা টাকা

দিতে হতো। আমি কতবড় চোর হলে এই কাজ করতে পারি। আমার প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন হওয়ার আগে যে প্রতিষ্ঠান থেকে এস.এস.সি পরীক্ষা দিত

সেই প্রতিষ্ঠানের এক শিক্ষক প্রতিষ্ঠানের সভাপতির বন্ধু। বন্ধুর ক্ষমতা বলে একজন শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক হয়ে আমার প্রতি শিক্ষার্থীর

কাছ থেকে সার্টি ফিকেট বাবদ ৩০০(তিনশত) করে টাকা নিত। মজার বিষয় হচ্ছে ঐ শারীরিক শিক্ষার শিক্ষকের ভাগ্নে আমার প্রতিষ্ঠানে পড়ত। ঐ

ভাগ্নে জানেনা তার মামা কত বড় চোর। আমার এক শিক্ষার্থী মার্ক শীট সত্যায়িত করানোর জন্য গেলে চোর মামা আমার শিক্ষার্থীর কাছ

থেকে ৫০০ টাকা সত্যায়ন বাবদ নেয়। ঐ শিক্ষার্থী ও যেহেতু আমার প্রতিষ্ঠানে পড়ত সেহেতু ক্ষমতা বলে সার্টিফিকেট ওখান থেকেই রেখে দেয়,  এবং

ঐ শিক্ষার্থীর কাছে আমাদের প্রতিষ্ঠান  এখনও  টাকা পাবে। তবুও চোরের মায়ের বড় গলা।  জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলনের পর থেকে

সুবিধাবাধী শিক্ষার্থীদের আর পা মাটিতে পড়েনা। যখনেই ইচ্ছে হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আক্রমণ,শিক্ষকদের অপমান,অপদস্ত করতে চেষ্টা করেছে।

তবে আমি মনে করি যারা এমন কাজ করেছে তারা আর যাই হোক  শিক্ষার্থী হতে পারেনা। কারণ   শিক্ষার্থীদের যেসব গুণাবলী থাকা উচিত,

তা যাদের মধ্যে আছে তারা অন্তত এমন গর্হিত কাজ করতে পারেনা। যদি কোন শিক্ষক দুর্নীতি   করে থাকে তাহলে তাকে অবশ্যই আইনের আওতায়

আনা হবে এবং বিভাগীয় ব্যবস্থার সিষ্টেম আছে। সেটা করা যেত। তা না করে আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে যে  দুর্নীতির     র্আশ্রয় নেয়া

 

হয়েছে সেটার বিচার কে করবে? একটা কথা ভুলে গেলে  চলবে না যে, বিচারপতির বিচারও কিন্তু হয়। আর ক্ষমতা ক্ষণস্থায়ী।

চলবে

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

প্রত্যেকের জায়গা থেকে আমরা দুর্নীতিবাজ

আপডেট সময় : ১০:৫৬:৫০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ভালো মানুষ আছে বলে পৃথিবীটা এখনো টিকে আছে। এই ভালো মানুষগুলো না থাকলে পৃথিবীটা সম্পূর্ণভাবে বসবাসের অযোগ্য হয়ে যেত। যদিও

আমার এই সোনার বাংলাদেশে ২০ ভাগ জায়গা সুন্দর বসবাসের যোগ্য কিনা সন্দেহ হয়। আমি আমার নিজেকে দিয়ে প্রথমে শুরু করতে

চাই। আমি একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালাই ,যেখানে আমাকে প্রতিদিন কামলা দিতে হয় সকাল ৯ থেকে রাত ৭ টা বা ৯ টা অনেক দিন ফজরের আযান

পর্যন্ত । এখন অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে চোর ছাড়া কারো এতক্ষণ কী কাজ থাকে? এমন প্রশ্নের সম্মূখীন হয়েছি তাই নিজের

আত্মসমালোচনা থেকে ই বলছি। দৈনিন্দিন চিঠির উত্তর দেয়া,বিভিন্ন অফিসের সাথে যোগাযোগ করা, চিঠি লিখা , দিন শেষে হিসাব

করা,অভিভাবকদের সমস্যা শোনা, শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধান, বিচার নালিশ , মাঝে মাঝে নিজের বাথরুম পরিস্কার করা, রুম পরিস্কার করা,

কম্পিউটার

অপেন হচ্ছেনা,  প্রিন্টারে প্রিন্ট নিচ্ছেনা, সফটওয়ারে এন্ট্রি দিতে সমস্যা হচ্ছে। রেজাল্ট পোষ্টিং , পাবলিশড, শিক্ষকদের ব্যক্তিগত,  প্রাতিষ্ঠানিক

সমস্যার কথা আমি কামলাকে শুনতে হয়। এর পরেও  অনেক শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের কাছে সাজতে হয় চোর। কারণ সার্টিফিকেট

নেওয়ার সময় কেন টাকা লাগে? খুব সুন্দর প্রশ্ন, আমারও  একই প্রশ্ন সার্টিফিকেট নিতে কেন টাকা লাগবে? আমি ৯০ দশকে সরকারি বালক উচ্চ

বিদ্যালয় থেকে পাশ করা একজন শিক্ষার্থী, আমার প্রশংসাপত্র, সার্টিফিকেট আনার সময়ও টাকা লেগেছিল। কিন্তু কেন লাগে এই প্রশ্ন সকল

অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের মতো আমারও।   কেন টাকা লাগে?।

আমার এই লেখা যেসব ফেরেশতারা পড়বেন তারা বাজে কমেন্ট করা থেকে বিরত থাকবেন। কারণ আমরা জানি ব্যবহারেই বংশের পরিচয়। আমি যে

প্রতিষ্ঠান চালাই সেই প্রতিষ্ঠানে সরকার কোন আর্থিক সহযোগিতা করেনা সেটা সবার যেনে রাখা ভালো।

যাই হোক সার্টিফিকেট আনলে প্রথমেই ঢাকা বোর্ডের পিয়ন স্যারকে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করতে হয় স্যার আপনি কেমন আছেন? পরে যেতে হয়

কেরানি স্যারের কাছে। কেরানি স্যারকে খুশি করতে পারলে রেজিঃ,সার্টিফিকেট,বা অন্যান্য ডকুমেন্ট আনা যায়। আর একটা পেট যেহেতু

আল্লাহ দিসে সেহেতু সকালে বাসে রওনা দিলে  সারাদিন কিছু খাবার দাবার খেতে হয়,সেখানেও যাতায়াত সহ বেশ কিছু টাকা খরচ হয়    এখন এই

টাকার যোগান আমি চুরি না করে দিতে পারিনা। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২০০ টাকা নিয়ে এই কাজটা করে থাকি। যদিও অনেকের দাবী আমি

২০০০ টাকাও নিয়ে থাকি।  তাহলে যেহেতু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আমি এই টাকা নিয়ে থাকি সেহেতু আমি আমার অবস্থান থেকে একজন  অপরাধি

এবং দুর্নীতিবাজ, বাংলাদেশের দন্ডবিধি যে আইনের আওতায় এই অপরাধে অপরাধী হবো সেই অপরাধে আমাকে শাস্তি প্রদানের জন্য

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি। কিন্তু যিনি আমাকে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন উনার যদি কোন শাস্তি যোগ্য অপরাধ থাকে তাহলে আগে তার

শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এবং যিনি বা যারা অভিযোগ করবেন তিনিও যদি কোন শাস্তি যোগ্য অপরাধ করে থাকেন তিনিও শাস্তির

আওতা থেকে যেন বাদ না যায়।  কারণ আমার শিক্ষাটাতো আমার সংশ্লিষ্টকর্তৃ পক্ষ দিয়েছেন।

আরও আগের কথা বলি যখন আমার প্রতিষ্ঠানের সরকারি অনুমোদন ছিলনা তখন যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ,একটি (এম.পিও ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান)

আমার শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিত সেখানে রেজিষ্ট্রেশন ফি বাবদ দেয়া লাগত ৫০০ টাকা এবং ঐ প্রতিষ্ঠানে আবার ভর্তি  বাবদও একটা টাকা

দিতে হতো। আমি কতবড় চোর হলে এই কাজ করতে পারি। আমার প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন হওয়ার আগে যে প্রতিষ্ঠান থেকে এস.এস.সি পরীক্ষা দিত

সেই প্রতিষ্ঠানের এক শিক্ষক প্রতিষ্ঠানের সভাপতির বন্ধু। বন্ধুর ক্ষমতা বলে একজন শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক হয়ে আমার প্রতি শিক্ষার্থীর

কাছ থেকে সার্টি ফিকেট বাবদ ৩০০(তিনশত) করে টাকা নিত। মজার বিষয় হচ্ছে ঐ শারীরিক শিক্ষার শিক্ষকের ভাগ্নে আমার প্রতিষ্ঠানে পড়ত। ঐ

ভাগ্নে জানেনা তার মামা কত বড় চোর। আমার এক শিক্ষার্থী মার্ক শীট সত্যায়িত করানোর জন্য গেলে চোর মামা আমার শিক্ষার্থীর কাছ

থেকে ৫০০ টাকা সত্যায়ন বাবদ নেয়। ঐ শিক্ষার্থী ও যেহেতু আমার প্রতিষ্ঠানে পড়ত সেহেতু ক্ষমতা বলে সার্টিফিকেট ওখান থেকেই রেখে দেয়,  এবং

ঐ শিক্ষার্থীর কাছে আমাদের প্রতিষ্ঠান  এখনও  টাকা পাবে। তবুও চোরের মায়ের বড় গলা।  জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলনের পর থেকে

সুবিধাবাধী শিক্ষার্থীদের আর পা মাটিতে পড়েনা। যখনেই ইচ্ছে হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আক্রমণ,শিক্ষকদের অপমান,অপদস্ত করতে চেষ্টা করেছে।

তবে আমি মনে করি যারা এমন কাজ করেছে তারা আর যাই হোক  শিক্ষার্থী হতে পারেনা। কারণ   শিক্ষার্থীদের যেসব গুণাবলী থাকা উচিত,

তা যাদের মধ্যে আছে তারা অন্তত এমন গর্হিত কাজ করতে পারেনা। যদি কোন শিক্ষক দুর্নীতি   করে থাকে তাহলে তাকে অবশ্যই আইনের আওতায়

আনা হবে এবং বিভাগীয় ব্যবস্থার সিষ্টেম আছে। সেটা করা যেত। তা না করে আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে যে  দুর্নীতির     র্আশ্রয় নেয়া

 

হয়েছে সেটার বিচার কে করবে? একটা কথা ভুলে গেলে  চলবে না যে, বিচারপতির বিচারও কিন্তু হয়। আর ক্ষমতা ক্ষণস্থায়ী।

চলবে