কোম্পানিগঞ্জে বনবিভাগের নির্দেশনা ছাড়া ১২টি গাছ কর্তন
- আপডেট সময় : ১০:২৭:২৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪ ৪৮ বার পড়া হয়েছে
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ১ নং পশ্চিম ইসলামপুরের ৯ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত এশিয়ার সর্ববৃহৎ বাংলাদেশ সরকারের স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান।
বিশ্বের দ্বিতীয় ডায়মন্ড সিমেন্টখ্যাত ছাতক সিমেন্ট কারখানা রজ্জুপথ বিভাগের ডিভাইডিং স্টেশনে কাজের উন্নয়নের জন্য কাটা হচ্ছে পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষায় বিরল বন্ধু সবুজ কচি গাছ।
অবাধে অতিরিক্ত গাছ কর্তন করে শুধুই উদাসীনতার মত পরিচয় দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ উন্নয়নের নামে অবাধে গাছ কাটা কতটা যৌক্তিক এ নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা জটিল সমীকরণ। এবং সরে জমিন ঘুরে ও পর্যবেক্ষণে দেখা মিলে তার বাস্তবতার করুণ প্রতিচ্ছবি একটি শতবর্ষী বিরাট বটগাছটি ও কেটেছেন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ
এ নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই কারো।
তবুও উন্নয়ন হোক, সমৃদ্ধ হোক জাতির এখানে স্মৃতির নীরব সাক্ষী হয়ে বটগাছটি ছিল সবুজ পরিবেশের সমারোহ তৃষ্ণাতুর পথিকের ক্লান্তি দেহের অবসাদ এবং বসার স্থল। (১৬-১০-২০২৪ইং তারিখে) খবর পেয়ে এই প্রতিবেদনটি সংগ্রহের কাজে নোয়াকুট ডিভাইডিং স্টেশনের ভিতরে ঢুকতেই বাধা প্রদান করে স্থানীয় দুই যুবক,উত্তেজিত কন্ঠে বলে ওঠেন এখানে কেন প্রবেশ করেছি। এটা সরকারের প্রতিষ্ঠান। তখন গণমাধ্যম কর্মীর পরিচয় দিতেই তারা নিশ্চুপ হয়ে যান।
তাদের কাছে সবিনয়ে জানতে চাইলে
ভাই আপনারা কি সরকারি কোন লোকজন! তখন তারা বলে আমরা এখানকার কেউ নই। আমরা এখানে ঢুকেছি আড্ডা দিতে। লোক ভিতরে আছেন একটু অপেক্ষা করলাম উনার জন্য তিনি আসেন নি। বলাবাহুল্য এত বড় একটি মেগা উন্নয়ন প্রজেক্ট হওয়া সত্ত্বেও কোন রকম নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়াই চলছে উন্নয়ন কাজ।
অবাধে বহিরাগতরাও অনায়াসেই বসে আড্ডা গল্প করতেছে। দেখা যায়নি নিরাপত্তা কাজের কোন আনসার বা নিরাপত্তা রক্ষীর। নিয়োজিত কোনো গার্ড চৌকিদারকে একটু সামনে যেতেই দেখা মিলল বাস্তবতার। পড়ে রয়েছে কচি গাছগুলোর গোড়ার কাটা চিত্র নীরব নিস্তব্ধতা অবিরত আমাদের কি দোষ ছিল? সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় কাটা গাছের জমিয়ে রাখা স্তুপ।
নোয়াকুট ডিভাইডিং স্টেশনের অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেনের,কাছে প্রশ্ন করা হলে বন বিভাগ আপনাদের কতটি গাছ কাটার অনুমোদন দিয়েছে।
উত্তরে তিনি বলেন এ বিষয়ে অফিস ম্যানেজমেন্ট ভালো বলতে পারবে আমি বলতে পারব না। তবে আমরা একটা নোটিশ দিয়েছিলাম বন বিভাগ যে কয়টি গাছের অনুমোদন দিয়েছে সে কটাই তো কাটবো বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
নোয়াকুট রজ্জুপথ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোহাম্মদ ইউসুফ আলীর, কাছে প্রশ্ন করা হলে জানান বন বিভাগের লোকজনেরা উন্নয়ন কাজের জন্য যেভাবে তারা নির্দেশনা দিয়েছেন।
আমরা তাদের ক্রাইটেরিয়া অনুযায়ী গাছ কর্তন করেছি এর বাইরে কিছু নয়। উনাকে পাল্টা প্রশ্ন করা হলে আপনারা তো বন বিভাগ থেকে দশটি গাছ কাটার অনুমোদন পেয়েছেন তো বাকি আরো ১২ টি গাছ কর্তন করেছেন এ সময় তিনি আর কিছু মন্তব্য করেননি।
প্রজেক্ট ডাইরেক্টর থেকে ২০২৪ সালে পদোন্নতিপ্রাপ্ত ম্যানেজিং ডাইরেক্টর বর্তমান ছাতক সিমেন্ট কোম্পানীর এমডি আব্দুর রহমান (বাদশার) কাছে সামগ্রিক বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে। স্টেশনের উন্নয়ন কাজের জন্য বন বিভাগ থেকে কতটি গাছ কাটার অনুমোদন পেয়েছেন তিনি আন্দাজ করে বলেন কাগজপত্র আমার কাছে নেই। তবে সম্ভবত আমরা ২০টি গাছ কাটার অনুমতি পেয়েছি উনার এ দায়সারা জবাবে বিস্মিত হতে হয়।
তিনি আরো বলেন আমি আগামীকাল ১০০ টি গাছের চারা লাগিয়ে দেবো,
তবে গাছ কাটার কাগজটা সপ্তাহখানেক হয় আসছে অতিরিক্ত ১২ টি গাছ কাটার বিষয়ের দৃষ্টিপাত করা হলে তিনি বলেন মনে হয় না। স্বচক্ষে দেখেছেন বাউন্ডারির ভিতরে যে গাছ পড়েছে তার বাইরে আমি একটি গাছও খাটি নাই। এত বড় একটা কাজ হচ্ছে গভমেন্টের একটা শিল্প ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছে কর্মযজ্ঞের মধ্যেই পড়েছে অতিরিক্ত গাছ কাটা হলে এ বিষয়ে আমি দেখবো বলে তিনি জানান।
এশিয়ার সর্ববৃহৎ দ্বিতীয় ডায়মন্ডখ্যাত সিমেন্ট কারখানায় গিয়ে দেখা যায় কোন প্রকার নিরাপত্তা দেয়াল বেষ্টনি ছাড়াই চলছে নির্মাণ কাজ। এবং রজ্জু’পথ বিভাগের নিয়মমাফিক অনুযায়ী ডিউটি না করে কর্মস্থলে শ্রমিকদের নিরাপত্তার কাজে বাধ্য করেছে কর্তৃপক্ষ। যেমন SST(1) SST(2) শ্রেণীর কর্মচারীদের দিয়ে নিরাপত্তারক্ষীর দায়িত্ব পালন করাচ্ছেন তারা।
এই দায়িত্ব পালন করার কথা আনসার অথবা নিরাপত্তা প্রহরীর এমন প্রশ্নের জবাবে এমডি বলেন আমাদের কারখানা যখন প্রোডাকশন ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে বন্ধ হয়ে যায়। তখন আমাদের কোম্পানি বোর্ড এখানে সরকারের টাকা পয়সা সাশ্রয়ের জন্য। কারখানার অনেক লোকজনকে বদলি করিয়ে নেন।
তাই বাকি SST(1) SST(2) শ্রেণীভুক্ত কর্মচারীদের দিয়ে এসব কাজ করানো হচ্ছে।ছাতক সিমেন্ট কোম্পানিতে ও ৫৬ জন কর্মচারী ও আছেন সেই তালিকায় সে কাগজপত্র চাইলে আছে দেখতে পারেন। যাদের কোনো কাজ নেই এজন্য তাদেরকে দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে।
ছাতক সিমেন্ট কোম্পানী কর্তৃপক্ষ বনবিভাগের নির্দেশনা কে তোয়াক্কা না করে। নিজ ক্ষমতাবলে এমডি আব্দুর রহমান বাদশা ও রজ্জুপথ বিভাগীয় প্রধান ইউসুফ আলীর নির্দেশক্রমে তাহারা। নিম্নরূপ গাছগুলো- মাঝারি সাইজের মেহগনি ৬টি,বকুল গাছ ১টি, মাঝারি সাইজের মমন গাছ ১টি,মাঝারি সাইজের রেইন্টি গাছ ৪টি অতিরিক্ত ১২টি গাছ কর্তন করেন।
সিলেট বনবিভাগের বিভাগীয় প্রধান হুমায়ুন কবীর,এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন ছাতক সিমেন্ট কারখানা রজ্জুপথ বিভাগের নোয়াকুট ডিভাইডিং
স্টেশনের উন্নয়ন কাজের জন্য গাছ কাটার আবেদন করলে আইন অনুসারে ১০ টি গাছ কাটার অনুমোদন দেওয়া হয়।
নিম্নরূপ,গাছের প্রজাতি: বড় সাইজের মেহগনি ৪টি, বকুল গাছ ২টি, বড় বটগাছ ১টি, বড় কৃঞ্চচূড়া গাছ ১টি, বড় চাম্বল গাছ ১টি, বড় আম গাছ ১টি। এর বাইরে উনারা অতিরিক্ত গাছ কাটতে পারেন না।
আমরা বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন বন কর্মকর্তার সহিত আলোচনা সাপেক্ষে আইনানুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।