ঢাকা ০৫:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সড়ক টেকসয়ের জন্য উপকারভোগীদেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৩:১০:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জুলাই ২০২৪ ৬৭ বার পড়া হয়েছে
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ড়ক টেকসয়ের জন্য উপকারভোগীদেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে

ফুলপুর (ময়মনসিংহ)প্রতিনিধিঃসরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে আমাদের চলাচলের জন্য কাঁচা বা পাকা সড়ক তৈরি করছে। কিন্তু সামান্য দায়িত্বহীনতার কারণে যত সময় টেকার কথা তত সময় টিকছে না এসব সড়ক। অল্প কিছু দিন পরই ভেঙে যাচ্ছে। কয়েক বছর পর একই সড়ক আবার করতে হচ্ছে। এতে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকার। এই ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে হলে বা এসব সড়ক টেকসই করাতে হলে সরকারের পাশাপাশি উপকারভোগীদেরও কিছু দায়দায়িত্ব নিতে হবে। এজন্য কমপক্ষে নিজের বাড়ির সামনের অংশ, পুকুর বা নিজের নিচু ক্ষেতের অংশে ভাঙন থেকে নিজেকে হেফাজত করতে হবে। কথায় বলা হয়, ‘দশের লরি একের বোঝা।’ অর্এথাৎ একটা কাজ দশজনে মিলে করলে যতটা সহজ কারো একার পক্ষে ততটা সহজ নয়। এমনকি সরকারের পক্ষেও নয়। আমরা অনেকে মিলে সড়ক ভাঙবো; ইট খুলে নিয়ে খাটের নিচে লাগাবো, আর সরকার তা একা একা ঠিক করে দিবে তা মনে হয় সম্ভব হবে না। এজন্য দরকার সম্মিলিত প্রচেষ্টা।
এ বিষয়ে ফুলপুর উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ রাকিব উল হাফিজ বলেন, সড়ক নির্মাণের এক বছরের মধ্যে যদি তা ভেঙে যায় তাহলে উহা সহজে সংস্কারের ব্যবস্থা আছে। কারণ এর জন্য কিছু অর্থ ফান্ডে থাকে। কিন্তু যদি সড়ক নির্মাণের তিন বছর পর ভাঙে তাহলে উহা সংস্কার‌ করা এতটা সহজ নয়। কেননা, তখন যতটুকু সড়ক ভেঙেছে এর জন্য কি পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ লাগতে পারে তা ঠিক করে প্রস্তাবনা পাঠাতে হয়। পরে উহা মঞ্জুর হয়ে আসতে আসতে সড়কের ভাঙন আরও বেড়ে যায়। এভাবে ওই ভাঙন সংস্কার‌ করাতে বেগ পেতে হয় প্রচুর। তাছাড়া আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে, ভাঙন সংস্কারের জন্য কেউ কেউ মাটি দিতে চায় না। মাটি দিলে সড়কের পানি নেমে যাওয়ার পথ দিতে চায় না।
এভাবে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তাহলে আমরা যথা সময়ে সড়ক সংস্কার‌ করবো কেমনে? হ্যাঁ, এটা খুবই চমৎকার প্রস্তাব। মাটি সরে যাওয়ার কারণে বা ভারি যানবাহন চলাচলের কারণে ইট পাথর বা সুরকি ভেঙে সড়কের পাড় যখন ভাঙন শুরু হয় তখনই দেরি না করে নিজেরা যদি সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের বাড়ির সামনের ভাঙন অংশটুকু মেরামত করে নেওয়া যায় তাহলে ভাঙন আর বাড়বে না। এতটুকু কাজ করলে সরকারি অর্থ সেইভ হওয়ার পাশাপাশি জনদুর্ভোগ কমবে এবং উন্নয়ন কার্যক্রম দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই হবে।
সড়ক টেকসই হলে এর সুফল শুধু নিজে নয় বরং আত্মীয় স্বজন ও দেশবাসীসহ পথচারীরা সবাই পাবেন। রবিবার (৩০ জুন) উপজেলার রূপসী ইউনিয়নের পাগলা মোড়সহ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, অনেকের বাড়ির সামনেই রয়েছে বড় বড় ভাঙন। এসব ভাঙনরোধে সচেতনতামূলক আলোচনা করলে পাগলা গ্রামের কাসেম ফকির ও তাইজুদ্দীনসহ অনেকেই বিষয়টি উপলব্ধি করতে সক্ষম হন এবং এখন থেকে নিজেদের বাড়ির সামনের সড়ক নিজেরাই হেফাজত করে রাখবেন বলে অভিব্যক্ত প্রকাশ করেন। পাগলা মোড় বাজারে তাইজুদ্দীনের দোকানের সামনে পানি জমে থাকতো। পরে এর অপকারিতা সম্পর্কে তাকে বুঝালে তিনি সেখানে মাটি ভরাট করে পরিবেশ সুন্দর রাখবেন বলে কথা দেন।
উল্লেখ্য, ছবিতে সড়ক ভাঙনের যে দৃশ্য দেখা যাচ্ছে এটা শুধু ফুলপুরের দৃশ্য নয় বরং হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও তারাকান্দাসহ এটি যেন সারাদেশের চিত্র। এ থেকে উত্তরণের জন্য কি ধরনের ভূমিকা রাখা যায় জানতে চাইলে ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ. বি. এম. আরিফুল ইসলাম বলেন, সড়ক সংরক্ষণে সরকারি বিধিমালা রয়েছে। এগুলো মেনে চলতে হবে। এছাড়া এ কলামে আপনি যে বিষয়টির প্রতি আলোকপাত করেছেন তা ফলো করা যেতে পারে। এটি খুবই প্রশংসনীয় একটি উদ্যোগ। উহা বাস্তবায়ন করতে পারলে স্থানীয় লোকজনসহ পথচারীরা উপকৃত হবেন। তাদের দুর্ভোগ কমবে। এ বিষয়ে ফুলপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, এটি অত্যন্ত চমৎকার একটি আইডিয়া। এ ব্যাপারে বিভিন্ন সভা সমাবেশে আমাদেরকে বক্তব্য রাখতে হবে। বক্তব্যের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে এবং সড়কের ছোটখাটো ভাঙন রোধ করতে পারলে আমাদের সবারই উপকার হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের বাড়ির সামনের সড়ক সবচেয়ে বেশি আমরাই ব্যবহার করে থাকি। ওই সড়ক ভাল থাকলে আমাদের জন্য ভাল। ভেঙে গেলে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হবে আমাদেরই। অতএব, এটাকে ভাল রাখার দায়িত্ব আমরা এড়াতে পারি না।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

সড়ক টেকসয়ের জন্য উপকারভোগীদেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে

আপডেট সময় : ০৩:১০:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জুলাই ২০২৪

ড়ক টেকসয়ের জন্য উপকারভোগীদেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে

ফুলপুর (ময়মনসিংহ)প্রতিনিধিঃসরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে আমাদের চলাচলের জন্য কাঁচা বা পাকা সড়ক তৈরি করছে। কিন্তু সামান্য দায়িত্বহীনতার কারণে যত সময় টেকার কথা তত সময় টিকছে না এসব সড়ক। অল্প কিছু দিন পরই ভেঙে যাচ্ছে। কয়েক বছর পর একই সড়ক আবার করতে হচ্ছে। এতে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকার। এই ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে হলে বা এসব সড়ক টেকসই করাতে হলে সরকারের পাশাপাশি উপকারভোগীদেরও কিছু দায়দায়িত্ব নিতে হবে। এজন্য কমপক্ষে নিজের বাড়ির সামনের অংশ, পুকুর বা নিজের নিচু ক্ষেতের অংশে ভাঙন থেকে নিজেকে হেফাজত করতে হবে। কথায় বলা হয়, ‘দশের লরি একের বোঝা।’ অর্এথাৎ একটা কাজ দশজনে মিলে করলে যতটা সহজ কারো একার পক্ষে ততটা সহজ নয়। এমনকি সরকারের পক্ষেও নয়। আমরা অনেকে মিলে সড়ক ভাঙবো; ইট খুলে নিয়ে খাটের নিচে লাগাবো, আর সরকার তা একা একা ঠিক করে দিবে তা মনে হয় সম্ভব হবে না। এজন্য দরকার সম্মিলিত প্রচেষ্টা।
এ বিষয়ে ফুলপুর উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ রাকিব উল হাফিজ বলেন, সড়ক নির্মাণের এক বছরের মধ্যে যদি তা ভেঙে যায় তাহলে উহা সহজে সংস্কারের ব্যবস্থা আছে। কারণ এর জন্য কিছু অর্থ ফান্ডে থাকে। কিন্তু যদি সড়ক নির্মাণের তিন বছর পর ভাঙে তাহলে উহা সংস্কার‌ করা এতটা সহজ নয়। কেননা, তখন যতটুকু সড়ক ভেঙেছে এর জন্য কি পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ লাগতে পারে তা ঠিক করে প্রস্তাবনা পাঠাতে হয়। পরে উহা মঞ্জুর হয়ে আসতে আসতে সড়কের ভাঙন আরও বেড়ে যায়। এভাবে ওই ভাঙন সংস্কার‌ করাতে বেগ পেতে হয় প্রচুর। তাছাড়া আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে, ভাঙন সংস্কারের জন্য কেউ কেউ মাটি দিতে চায় না। মাটি দিলে সড়কের পানি নেমে যাওয়ার পথ দিতে চায় না।
এভাবে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তাহলে আমরা যথা সময়ে সড়ক সংস্কার‌ করবো কেমনে? হ্যাঁ, এটা খুবই চমৎকার প্রস্তাব। মাটি সরে যাওয়ার কারণে বা ভারি যানবাহন চলাচলের কারণে ইট পাথর বা সুরকি ভেঙে সড়কের পাড় যখন ভাঙন শুরু হয় তখনই দেরি না করে নিজেরা যদি সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের বাড়ির সামনের ভাঙন অংশটুকু মেরামত করে নেওয়া যায় তাহলে ভাঙন আর বাড়বে না। এতটুকু কাজ করলে সরকারি অর্থ সেইভ হওয়ার পাশাপাশি জনদুর্ভোগ কমবে এবং উন্নয়ন কার্যক্রম দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই হবে।
সড়ক টেকসই হলে এর সুফল শুধু নিজে নয় বরং আত্মীয় স্বজন ও দেশবাসীসহ পথচারীরা সবাই পাবেন। রবিবার (৩০ জুন) উপজেলার রূপসী ইউনিয়নের পাগলা মোড়সহ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, অনেকের বাড়ির সামনেই রয়েছে বড় বড় ভাঙন। এসব ভাঙনরোধে সচেতনতামূলক আলোচনা করলে পাগলা গ্রামের কাসেম ফকির ও তাইজুদ্দীনসহ অনেকেই বিষয়টি উপলব্ধি করতে সক্ষম হন এবং এখন থেকে নিজেদের বাড়ির সামনের সড়ক নিজেরাই হেফাজত করে রাখবেন বলে অভিব্যক্ত প্রকাশ করেন। পাগলা মোড় বাজারে তাইজুদ্দীনের দোকানের সামনে পানি জমে থাকতো। পরে এর অপকারিতা সম্পর্কে তাকে বুঝালে তিনি সেখানে মাটি ভরাট করে পরিবেশ সুন্দর রাখবেন বলে কথা দেন।
উল্লেখ্য, ছবিতে সড়ক ভাঙনের যে দৃশ্য দেখা যাচ্ছে এটা শুধু ফুলপুরের দৃশ্য নয় বরং হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও তারাকান্দাসহ এটি যেন সারাদেশের চিত্র। এ থেকে উত্তরণের জন্য কি ধরনের ভূমিকা রাখা যায় জানতে চাইলে ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ. বি. এম. আরিফুল ইসলাম বলেন, সড়ক সংরক্ষণে সরকারি বিধিমালা রয়েছে। এগুলো মেনে চলতে হবে। এছাড়া এ কলামে আপনি যে বিষয়টির প্রতি আলোকপাত করেছেন তা ফলো করা যেতে পারে। এটি খুবই প্রশংসনীয় একটি উদ্যোগ। উহা বাস্তবায়ন করতে পারলে স্থানীয় লোকজনসহ পথচারীরা উপকৃত হবেন। তাদের দুর্ভোগ কমবে। এ বিষয়ে ফুলপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, এটি অত্যন্ত চমৎকার একটি আইডিয়া। এ ব্যাপারে বিভিন্ন সভা সমাবেশে আমাদেরকে বক্তব্য রাখতে হবে। বক্তব্যের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে এবং সড়কের ছোটখাটো ভাঙন রোধ করতে পারলে আমাদের সবারই উপকার হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের বাড়ির সামনের সড়ক সবচেয়ে বেশি আমরাই ব্যবহার করে থাকি। ওই সড়ক ভাল থাকলে আমাদের জন্য ভাল। ভেঙে গেলে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হবে আমাদেরই। অতএব, এটাকে ভাল রাখার দায়িত্ব আমরা এড়াতে পারি না।